Personal Protective Equipments (Bengali)
29th May, 2020.
ভারতবর্ষে করোনা রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার। মৃত প্রায় ৪৮০৬ জন মানুষ।
গত বছর ও এই সময় আমরা আন্দাজ পাইনি ২০২০ আমাদের জন্য কি আঘাত আনতে চলছে। কোনো দিন ভেবেও দেখিনি যে একদিন নিজের চেম্বারে যেতে আমাদের ভয় পেতে হবে এক মারণ রোগের জন্যে। আজ আমরা সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যেখানে লোকে দাঁতের যন্ত্রনায় কষ্ট পেলেও আমরা তাদের শুধু ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য। ইচ্ছে থাকলেও কোন ভাবে সাহস পাওয়া যায়না একটা লোকের দাঁতে filling করে দেওয়ার। আর তার মূল কারণ একটা ভয়। একটা ছোয়াচে মারণ রোগের ভয়। ডাক্তার রোগের ভয় পালিয়ে যায়না। কিন্তু এ এমন রোগ, যে ডাক্তার আক্রান্ত হলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আরো কয়েকজন সুস্থ মানুষ কে সংক্রমিত করে দেবে।
এইমত অবস্থায় আমাদের দাঁতের ডাক্তারদের সামনে সব থেকে বড় চিন্তার বিষয় 'আমরা কাজে ফিরবো কি ভাবে??' সরকারী ভাবে অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অন্ধের মত সেইসব জিনিস কিনে নিলেই 'আমরা কি রোগ থেকে পালাতে পারবো??' কারণ এইসব ব্যবহারের কোন খবর বা হদিস তো এতদিন আমরা রাখিনি। তাহলে আজ হঠাৎ কোনটা ভালো 'কোনটা মন্দ বুঝবো কি করে???'
ভালো মন্দের বিচার তো আর এত সস্তায় করা যায়না? সে তো চাঁদ সওদাগর ও নিজের ছেলে কে লোহার ঘরে রেখেছিলেন মনসার থেকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু লক্ষিন্দরের কি পরিণতি হয়েছিল, সে তো আজও একটা দৃষ্টান্ত।
রোগ আটকানোর উদ্দেশ্যে PPE এর ব্যবহার ও অনেকটা সেই চাঁদ সওদাগরের লোহার ঘরের মতন। বিশ্বকর্মা কে খুঁজে আমরা বিশ্বাস করছি ঠিকই। কিন্তু সেই বিশ্বকর্মা তার কাজে কোন গাফিলতি রাখলো না তো?? আমিও অন্ধের মত বিশ্বকর্মা কে বিশ্বাস করে লোহার ঘর পরখ করে না দেখার জন্যে বিপদে পরবো না তো???
PPE এর ইতিহাস??
একজন গাড়ি সরানোর mechanic বা কয়লা খনির মজুর যে আলাদা পোষাক ব্যবহার করে নিজের জামায় কালি ঝুল আটকানোর জন্যে, সেটাও PPE। আবার রান্না করার সময় রাধুনী যে আলগা পোষাক গলায় ঝুলিয়ে নেয় তেল ঝোল আটকানোর জন্যে সেটাও PPE। আবার দমকল কর্মী যে পোশাক পরে সেটাও তাদের PPE। কিন্তু তাই বলে তো আর এগুলো পরে ডাক্তারী করা যায়না।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় প্রথম PPE এর (ডাক্তারী ক্ষেত্রে) ব্যবহার শুরু হলো, প্রকৃত অর্থে, ইউরোপে Bubonic plague এর সময়। যাকে আমরা গ্রেট প্লেগ অফ মার্সাইলি বলে থাকি।
শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রোগ সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই বিশেষ পোষাকের ভাবনা আসে ১৫৬৪ শালে বানানো মৌমাছি চাষীদের পোষাক দেখে। তারা এক ধরনের বিশেষ মোটা কাপর নিজেদের পরা পোষাকের ওপর চাপিয়ে নিত। আর এক ধরনের মুখোশ পরে মৌমাছির আক্রমণ প্রতিহত করতো।
প্রথম ডাক্তারী ব্যবহার উপযোগী PPE kit বানিয়েছিলেন একজন ফরাসী ডাক্তার Charles de L'Orme। একটি হালকা অথচ পুরু পোষাকের ওপর মোমের প্রলেপ দিয়ে তিনি বাইরের আলগা পোষাক তৈরি করেন। এই পোষাকের বিশেষত্ব এই যে, এই পোষাক জলে ভিজবে না। আর তৈরি করেন সেই বিশেষ মুখোশ যাকে দেখতে অনেকটা পাখির ঠোঁটের মতন। চোখের জায়গায় কাঁচের পাত দিয়ে ব্যবস্থা করা হয়।
এই মুখোশের পরিকল্পনা কিন্তু স্বয়ং লিওনার্দো দি ভিঞ্চি এর করে যাওয়া। ভাবতেও অবাক লাগে, তাঁর দূরদর্শিতার কথা ভেবে। পাখির ঠোঁটের আকারের মুখোশের ভিতর নাকের দিকে রাখা থাকতো বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক গুণের মশলা, সুগন্ধী ফুলের পাপড়ি, আর ঔষধী গাছের পাতা বা মূল। এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল কারণ মৃত মানুষের দুর্গন্ধ বা রোগাক্রান্ত মানুষের গন্ধ থেকে রোগ ছড়ায় এই ধারণা প্রচলিত ছিল বলে। এই দুর্গন্ধ থেকে রোগ ছড়ানোর ধারনা কে Miasma বলা হয়।
আধুনিক যে পোষাক, সংক্রামক রুগীর চিকিৎসায়, ব্যবহার করা হয় সেই ধারনা আসে ১৯১০ শালে মালয়েশিয়ার একজন চিকিৎসক Wu Lien-teh এর বানানো পোষাক দেখে। এরপর নানান আবিষ্কার ও সংশোধন এর মাধ্যমে আজকের PPE আধুনিক চেহারা পায়।
অজানা সংক্রামক রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্যে এবং ডাক্তারের মাধ্যমে রোগ যাতে ছড়িয়ে না পরে সেই উদ্দেশ্যে ১৯৭০ শালে PPE সম্পর্কে প্রথম একটি নির্দেশ ব্যবস্থা বানানো হয়। CDC বা Centers for Disease Control and Prevention এর তরফ থেকে এই নির্দেশ বহুবার সংশোধনের মাধ্যমে পূর্ণ রূপ পায় ১৯৭৫ শালে।
১৯৮০ শালের প্রাককালে একটি গবেষণায় জানা যায়, যে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবাণু নিজেদের গঠনগত পরিবর্তন করে আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ১৯৮৩ ও তারপর ১৯৮৫ তে HIV ভাইরাসের দৌরাত্বে CDC এর দেওয়া নির্দেশিকায় অনেক পরিবর্তন করা হয়। তারপর ১৯৮৯ শালে OSHA অর্থে Occupational Safety and Health Agency, রক্ত বাহিত রোগ এবং বায়ু বাহিত সংক্রামক রোগের প্রতিরোধে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। সেই নিয়ম মেনে ১৯৯১ শালে PPE ব্যবহারের আদর্শ নির্দেশিকা বানানো হয়।
মোটামুটি সেই নির্দেশিকা মেনেই এতদিন চিকিৎসা হয়ে এসেছে কিন্তু একটি বড় ধাক্কা আসে ২০০৪ শালে SARS, ২০১৪ শালে MERS রোগের গতি প্রকৃতি দেখে। আর আজ ২০২০ শালে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী যে কত অসহায় হয়ে পরেছেন সে দৃশ্য আমাদের সামনেই রয়েছে।
একটি PPE kit এর মধ্যে কি কি প্রয়োজন??
একটি সম্পূর্ণ PPE kit এর মধ্যে এই কটি জিনিস অতি অবশ্য থাকা জরুরি আমাদের ডাক্তারদের জন্যে
১টি FFP 2 বা FFP 3 mask।
এককালীন ব্যবহারের ১টি ফুল হাতা gown
এককালীন ব্যবহারের ১ জোড়া Nitrile gloves
চোখের জন্যে বিশেষ চশমা বা visors
এককালীন ব্যবহারের ১টি head cap
এককালীন ব্যবহারের ১ জোড়া লম্বা shoe cover।
আর alcohol hand sanitizer।
এই FFP mask বস্তুটি কি??
একে বলা হয় Filtering Face Piece mask বা respiratory protection mask। Surgical mouth mask এর সাথে এর কোন তুলনা হয় না কারণ হতে পারেনা।
রোগ বাহী জীবাণু, ধুলো, aerosol, বা droplet কে আটকানোর ক্ষমতা বিচারে এই mask ৩ প্রকারের।
FFP 1- প্রায় ৮০% প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্ত mask। একে চেনার উপায় হলো এদের elastic band হলুদ রঙের হয়।
FFP 2- প্রায় ৯৪% বায়ু বাহিত কণা প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে এই mask। জলীয় বাষ্প বা তরল পদার্থ কে আটকানোর ক্ষমতা ৯২%। এদের চেনার উপায় এদের elastic band নীল অথবা সাদা রঙের হয়।
FFP 3- ৯৯% বায়ু বাহিত কণা আটকানোর ক্ষমতা যুক্ত। জলীয় বাষ্প বা তরল পদার্থ কে আটকানোর ক্ষমতা ৯৮%। এই mask এর elastic band লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে FFP 3 mask এর সাথে একটি exhalation valve থাকে। FFP 3 mask এর উপাদান এতই পুরু হয় যে অনেক সময় শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হতে শুরু করে। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় এই ধরনের mask কোনো ভাবেই উপযুক্ত নয়।
মাস্কের ফিতে হলদে সবুজ লাল নীল এসব দেখেই মাস্ক চেনা যাবে? অনেক মাস্ক তো এই ভাবেই তৈরি। তবে?
ওই যে প্রথমে বললাম। বিশ্বকর্মা আর চাঁদ সওদাগরের গল্প। এক্ষেত্রেও তাই।
ওই যে প্রথমে বললাম। বিশ্বকর্মা আর চাঁদ সওদাগরের গল্প। এক্ষেত্রেও তাই।
ফুল হাতা gown বা Tyvek suit কি বস্তু??
১৯৫৫ শালে Giulio Natta নামের এক বিজ্ঞানী Du-point নামের একটি কাপড়ে কলে polyethylene নিয়ে কাজ করার সময় বর্জ্য হিসেবে ব্যবহৃত পাইপের মধ্যে থেকে একরকম সাদা আঠালো পদার্থ আবিষ্কার করেন। ১৯৫৯ এ দেখা যায় সেই chemical টি কে একটি বড় wheel এর মধ্যে জোরে প্যাঁচাতে শুরু করলে এটি fabric কাপরের মতন আকার নেয়। Giulio Natta এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারে মনোনীত হন, আর DuPont এই chemical দিয়ে কাপড় তৈরি করতে শুরু করে ১৯৬০ শালে।
এর মূল ব্যবহার ছিল মূলত Oil refinary বা বিভিন্ন chemical factory তে কাজ করা মজুরদের ব্যবহারের জন্যে। কিন্তু ক্রমে এই material ডাক্তারি PPE তৈরি করার কাজে ব্যবহার হতে শুরু করে।
এই বিশেষ fiber এ তৈরি কাপড়ের বিশেষত্ব হলো
এর
>ওজন কম
>খুব ভালো দাহ্য পদার্থ
>যে কোন chemical কে অতি সহজে প্রতিরোধ করতে পারে
>Dimension এর দিক থেকে stable
>স্বচ্ছ
>চামড়ার কোন ক্ষতি করেনা। (Allergy না থাকলে)
>সহজে ছিড়ে ফেলা যায়না।
আমাদের এখানে যে ভাবে ঘরে ঘরে এখন PPE তৈরি হচ্ছে তাতে Tyvek suit এর অস্তিত্ব সম্পর্কে একটু সন্দেহ মনের কোণে জায়গা করেই নেয়।
এবার আসি, কেন Nitrile gloves??
আমাদের ডাক্তারিতে ব্যবহার করা gloves মূলত ৩-৪ রকম পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় Latex gloves। এর মূল উপাদান উদ্ভিজ রাবার জাতীয় বস্তু। অবশ্য এখন synthetic rubber এর যুগে synthetic latex দিয়েও gloves বানানো হয়।
বাকী প্রকারভেদ যেমন, Nitrile rubber, Poly vinyl chloride এবং Neopropene।
Nitrile gloves আসলে দুরকম copolymer এর একটি অসম মিশ্রন যার থেকে তৈরি gloves এর গুণগত মান অনেক উন্নত।
2-propenenitrile আর 1-2 butadene এর মূল উপাদান।
এর ব্যবহার অধিকাংশ ক্ষেত্রে chemical lab এবং oil refinery তে কর্মরত শ্রমিকদের জন্যে হলেও এর ব্যবহার এখন অনেক সুদূর প্রসারী। Nitrile gloves কার্যক্ষমতা বিভিন্ন তাপমাত্রায় এত টুকু পাল্টায় না। বিভিন্ন acid থেকে শুরু করে নানা রকম chemical কে অতি সহজে প্রতিরোধ করতে পারে। আর এর বিশেষ গুণে এই gloves চট করে ছিড়ে যায়না। এতদিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ চামড়ার সাথে কোন রকম reaction দেখা যায়নি। যাদের allergy আছে তাদের বাদ দিয়ে।
সারা বিশ্ব ব্যাপী এই দুর্নীতির বাজারে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও যে তার প্রভাব থাকবে না। এই কথা অবিশ্বাস্য হলেও মেনে নিতে হয়। কিন্তু চিরকাল দুর্নীতির মধ্যে থেকেও আমরা বেঁচে থেকেছি। এখনো থাকবো। কথায় আছে ঠেকে শেখা আর ঠকে শেখা। ঠকার থেকে ঠেকে শেখা অনেক শ্রেয় আশা করি।
ও হ্যাঁ!!! GSM বস্তুটি কি বলা হয়নি।
দোকানে কাপড় কিনতে গিয়ে জামার collar এ লক্ষ্য করেছেন কখনো?? সেখানে 50/50 বা 80/20 এরকম ভাবে সংখ্যা লেখা একটা অংশ থাকে। 50/50 এর তর্জমা করলে দাড়ায় ৫০ ভাগ cotton আর ৫০ ভাগ polyester।
ঠিক সেখানেই GSM এর ও উল্লেখ থাকে।
একে grams per square meter বলা হয়। এক কথায় সুক্ষতার হিসেবে কাপড়ের ওজন আন্দাজ পাওয়ার একটি metric system। এর ভিত্তিতেই আপনি হাতের পরোখে আন্দাজ করে শীতের পোষাক আর গরমের পোষাক নির্বাচন করেন।
GSM >180হলে সেটি শীতকালীন পোষাকের আদর্শ। আর GSM <130 হলে সেই পোষাক গরম কালের আদর্শ।
ডাক্তারি PPE cover এর ক্ষেত্রে মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা gown 41gsm এর থেকে শুরু হয় । এরকম ভাবে একে একে 49, 63, 65, 69 করে 110 অব্দি gsm কাপড়ের প্রকারভেদ আছে।
ভারতবর্ষে সব থেকে বেশী ব্যবহৃত PPE প্রস্তুত কারক সংস্থা হলো 3M, Du Pont, Honeywell, Microgard আর UVEX।
এরা বিভিন্ন PPE set কে এক একটি model নম্বর দিয়ে বাজারে নিয়ে এসেছে। কাজের ভিত্তিতে প্রতিটি PPE set এর গুরুত্ব ও ব্যবহার আলাদা। তাদের পরে কাজ করা এবং কাজ হয়ে গেলে ফেলে দেওয়ার নিয়ম আলাদা।
এখানেও কিছু লোক reusable ppe বলে অতি সাধারণ মানের ppe কে চালিয়ে দিচ্ছে। হয়ত এতে আমাদের অনেক টাকা বেঁচে যাবে। কিন্তু আদৌ যে আমরা ঠিক ব্যবহার করছি কি না সে একমাত্র ঈশ্বর জানেন।
Dr. Arka Bhattacharya
Kolkata
It is very difficult to read bengali....
ReplyDeleteঅসাধারণ দাদা।
ReplyDeleteThank you.
DeleteThank you
Delete