Sunday, June 14, 2020

Business during Corona Pandemic

 
Businesses during Corona Pandemic

করোনা আবহে সাধারণ দোকানের জন্যে কিছু তথ্য।



উত্তরোত্তর করোনা সংক্রমণের নজির রীতিমত ভীতি সঞ্চার করেছে সাধারণ মানুষের মনে। ইতিমধ্যে ভারতবর্ষে সংক্রমিত রুগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ২২ হাজার মানুষ। কোন মানুষ যে উপসর্গ হীন করোনা রোগের বাহক তা নির্দিষ্ট করে বলা এখন অসম্ভব। কিন্তু এই ভয় নিয়ে তো আর ব্যাবসা বন্ধ রাখা যায়না। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের যারা একটি দোকানের উপর নির্ভর করে সংসার করেন তাদের জন্যে এই মহামারী এক দুর্বিষহ অধ্যায়। আর্থিক ক্ষতির কোন সীমা পরিসীমা রাখেনি এই করোনা সংক্রমণ। ব্যাবসা তো করতেই হবে, দোকানে যেতেই হবে। কিন্তু কি ভাবে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে হয়ত কিছুটা ভয় মুক্ত থাকা যাবে সেই বিষয়ে এই আলোচনা। 
Woman in White Long Sleeve Jacket Shopping For Fruits
Pexels

একদম গোঁড়ার কথা।


একটি তথ্যে বলছে, ২ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে একজন সুস্থ ব্যাক্তি যদি ১২ মিনিট ধরে কোন একজন করোনা রুগীর সাথে বা করোনা রোগের বাহকের সাথে কথা বলেন। সেক্ষেত্রে সুস্থ মানুষটির সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা ৭০%। যদি শারীরিক ভাবে এই সুস্থ মানুষটি দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে করোনা রোগের উপসর্গ দেখা দেবে ৩ দিন পর থেকে। অতঃপর প্রায় তিন সপ্তাহের একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন। 

শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত হয়ে দুর্ভোগের কথা যদি না-ও ধরা হয়, তাহলে সামাজিক ভাবে একটা পিছিয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। আধুনিক মানুষের মানসিকতা অনুযায়ী বেশ কিছুদিন তারা আপনাকে এড়িয়ে চলবে করোনা রোগের ভয়। ব্যাবসার ক্ষেত্রে আরও বড় ক্ষতি। 
Young friends with medical masks on street
Pexels


কি উপায় আছে সুস্থ থাকার??


১) একেবারে প্রাথমিক নিয়মের হিসেবে দেখতে গেলে বলতে হয় মাস্ক এর ব্যাবহার। কোন অবস্থাতেই, কোন রকম ভাবেই অপরিচিত বা পরিচিত কোন ব্যাক্তিকে, যিনি বাইরে থেকে দোকানে আসছেন, তাদের মাস্ক ছাড়া দোকানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আপনি যদি সরাসরি খদ্দের এর সাথে কথোপকথন এর  কাজ করছেন তাহলে আপনাকেও মাস্ক পরে থাকতে হবে। 

২) দোকানে প্রবেশের আগে অবশ্যই স্যানিটাইজ করে নিতে হবে খদ্দেরের পোষাক এবং হাত ও পা। জুতো পরে কোন ভাবেই দোকানের ভিতরে প্রবেশ করা যাবে না। যে দোকানে খদ্দের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের জিনিস কেনেন যেমন মিষ্টির দোকান বা ছোট ওষুধের দোকান সেখানে গল্প আলাদা। কিন্তু বদ্ধ ঘর দোকানের ভিতরে বাইরের জুতো পরে কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়াই উচিৎ। হাজার হোক আমরা ভারতীয়। পথে ঘাটে থুতু ফেলা, বা পান খৈনির থুতু ফেলা আমাদের স্বভাব। কাজেই রাস্তা দিয়ে আসার সময় সেই কফ - থুতু মারিয়ে আসা জুতো আপনার দোকানের মেঝের জন্যে বিপজ্জনক। 


৩) কুনুই অব্দি প্রত্যেক খদ্দের যেন হাত স্যানিটাইজ করে নেয়। কাপড়ের দোকান, পার্লার, গয়নার দোকান ইত্যাদি দোকানে, যেখানে একজন খদ্দের দীর্ঘ সময়ের জন্যে নিজের পছন্দের জিনিস কিনতে আসছেন। তাদের জন্যে এই নিয়ম আবশ্যিক। তারা বিভিন্ন জায়গায় হাত দেবেন, বিভিন্ন জিনিস পরখ করে দেখবেন। তাই তাদের হাত পরিষ্কার থাকা আবশ্যিক। 
Shallow Focus Photography of Assorted-color Clothes Hanged on Clothes Rack
Pexels


৪) দোকানে প্রবেশের পর কোন কারণে খদ্দের যদি নিজের মাস্ক খুলে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাহলে তাকে একটি ২ পল্লার নতুন পাতলা মাস্ক দিন। এই মাস্কে সে অনেক স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস চালাতে পারেন। এইভাবে আপনি আপনার খদ্দেরকে সাহায্য করলেন সুস্থ থাকার জন্যে আর নিজেকেও আশ্বস্ত করতে পারলেন। 

৫) দোকানে যেন অবশ্যই খুব ভালো হাওয়া চলাচলের ব্যাবস্থা থাকে। স্থির জলে যেমন ডেঙ্গুর মশা জন্মাতে পারে, ঠিক সেই ভাবেই বদ্ধ ঘরের বাতাসের মধ্যে করোনা ভাইরাস ড্রপলেট এর মাধ্যমে প্রায় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। খুব স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে বাতাসের মাধ্যমে প্রায় ৩ ফুট দূরত্ব অব্দি একজন মানুষের মুখ বা নাসা পথ থেকে নির্গত ড্রপলেট ভেসে যেতে পারে। দীর্ঘ শ্বাস, কাশি বা হাঁচি হলে সেই ড্রপলেট নিমেষে ৮ ফুট অব্দি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। আর ঠিক এই কারণেই মাস্কের ব্যাবহার আবশ্যিক। বদ্ধ ঘরের ক্ষেত্রে জানলা দরজা দিয়ে স্বাভাবিক বায়ু চলাচলের ব্যাবস্থা না থাকায় এই রোগ যুক্ত বাতাসের স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দীর্ঘ। কাজেই, দোকান ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পরেও আপনি সুরক্ষিত ভেবে যদি নিজের মাস্ক খুলে রাখেন, ২০% সম্ভাবনা রয়েছে আপনি ওই বাতাসে সংক্রামিত হবেন।

৬) নিজের জন্যে এবং দোকানের বাকী কর্মচারীদের জন্যে আলাদা মাস্ক এবং পোষাকের ব্যাবস্থা করুন। আপনি হয়ত বাড়ির কাছেই দোকানে আসছেন, রাস্তায় রোগ বহন করে আনার সম্ভবনা ১৬%। কিন্তু আপনার কর্মচারী যারা বিভিন্ন যানবাহনে অনেকটা পথ অতিক্রম করে আসছেন, তাদের জন্যে সংক্রমণ বয়ে আনার সম্ভবনা অনেক বেশী। আপনি নিজেও যেমন তাদের কাছে এই রোগের বাহক হয়ে উঠতে পারেন, আপনার কর্মচারীদের থেকেও আপনি সংক্রামিত হয়ে যেতে পারেন। প্রত্যেক বড় দোকানেই কিছুটা হলেও অতিরিক্ত জায়গা থাকে। সেই জায়গায় পোষাক পরিবর্তনের ব্যাবস্থা করে দিন। কারণ এই মানুষগুলো সারাদিন আপনার কাজে সহায়তা করবে। বাইরের থেকে আসা ওই পোষাক আপনার জন্যে এবং তাদের জন্যেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। 

৭) নিয়ম করে প্রতি এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা অন্তর সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া। একটি সমীক্ষায় বলছে সারাদিনে প্রতি ঘণ্টায় একজন মানুষ প্রায় ১৬ বার নিজের মুখে হাত দেন। সেটা চশমা ঠিক করার প্রয়োজনে হতে পারে, মুখের ঘাম মোছার জন্যে হতে পারে ইত্যাদি। একজন খদ্দের এর সাথে বিকিকিনি হয়ে গেলে সুযোগ থাকলে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। অগত্যা স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন। 

৮) কোন খদ্দের যদি অতিরিক্ত ব্যাগ নিয়ে আসেন, একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দিন দোকানের দরজার কাছে যেখানে তারা ব্যাগ রেখে আসতে পারবেন। কর্মচারীদের জন্যেও আলাদা একটা ব্যাগ রাখার জায়গা করে দিলে ভালো। 

৯) প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তত একবার হলেও ফিনাইল জলে ঘরের মেঝে পরিষ্কার করেনিন। কোন একজন কর্মচারী নিশ্চয়ই দ্বিধা বোধ করবেন না এই কাজ করে দিতে, যখন তার সুস্থ থাকাও এখানে নির্ভরশীল।

১০) সর্বশেষ নিয়ম, যেটা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ত সম্ভব নয়, সেটা হল এক সাথে দোকানের ভিতর ভিড় না করা। এতে বিপদ বেশী। 


মাস্কের ব্যাবহার।

খুব দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মাস্ক সম্পর্কে একটা বিতর্কিত ছিন্তা ভাবনার কারণে আজকে সঠিক মাস্ক নিয়ে এত বিভ্রান্তি। কোন সময় ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন সুস্থ মানুষের মাস্কের কোন প্রয়োজন নেই। এখন আবার পরামর্শ আসছে হয়ত এখন ঘরের মধ্যেও মাস্ক পরে থাকতে হবে। সঠিক মাস্ক যে কোনগুলো, এবং কিভাবে যে তার ব্যাবহারে উপকার পাবো সেই হদিশ এখন বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

সাধারণ মানুষের জন্যে N-95 মাস্ক আবশ্যিক নয়। কোন মানুষ যদি করোনা সংক্রামিত রুগী বা করোনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে N-95 মাস্ক এর আবশ্যিকতা কিছুটা হলেও আছে।যদি N-95 মাস্ক ব্যাবহার করছেন, কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। নাহলে একটি পাতলা সুতির রুমাল ও N-95 মাস্ক এর মধ্যে কোন তফাৎ নেই। 

ওষুধের দোকান, কাপড়ের দোকান, পার্লার, গয়নার দোকান, এইসব জায়গায় খুব কাছ থেকে একজন গ্রাহকের সাথে কথা বলার প্রয়োজন থাকে। বহুদুর থেকে দাঁড়িয়ে শাড়ি দেখালে কেউ কিনবে না। আবার অনেক দূর থেকে দাঁড়িয়ে একজনের চুল কাটাও যাবে না। এইরকম কাজের জন্যে N-95মাস্কের ব্যাবহার উপযুক্ত। কিন্তু আবশ্যিক একদম নয়। তাই বলে সামান্য সুতির কাপড়ের মাস্ক বা রুমাল বেঁধে নিলেও চলবে না। ব্যাবহার করতে হবে প্রকৃত সারজিকাল মাস্ক। ৩ প্ললার সারজিকাল মাস্ক আপনাকে ৮০% সুরক্ষা দেবে একজন সম্ভাব্য করোনা বাহকের থেকে। যে সব দোকানে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেও গ্রাহক বিক্রেতা সম্পর্ক রাখা সম্ভ্‌ সেখানে অন্যান্য মাস্ক এর ব্যাবহার করা যেতে পারে। যদিও একটা সামান্য কাপড়ের মাস্ক এই মহামারীর সময় আপনাকে ৬০% সুরক্ষাও দেবে না যদি সত্যি একজন উপসর্গ হীন করোনা বাহক বা সংক্রামিত রুগী আপনার ৬ ফুট দূরত্বের মধ্যে চলে আসে। 
Woman Selecting Beaded Jewelry
Pexels

সঠিক N-95 মাস্ক কোন গুলো? 

N-95 মাস্ক এমন বিশেষ পদার্থ দিয়ে তৈরি যা বাতাসের ৯৫% বায়ুবাহিত রোগ কে প্রতিরোধ করতে পারে। 
এই মাস্ক নির্দিষ্ট মডেল নম্বর দিয়ে বানানো হয়। এদের দেশী বা বিদেশী বিভিন্ন সংগঠন স্বীকৃতি দেয়। আর আছে কোম্পানির পরিচিতি। এখন অবশ্য একই নাম দিয়ে অনেক জালি কোম্পানি তাদের নিকৃষ্ট মানের মাস্ক বাজারে নিয়ে এসেছে। কিন্তু একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখলে এড়িয়ে যাওয়া যায় এদের থেকে। 

N-95মাস্ক এর প্রথম শর্ত কি? একটি এন ৯৫ মাস্ক এর ব্যাবহারকারি সেটা সঠিকভাবে পরার পরে, যদি মাস্কের ভিতরে জোরে ফু দেন। মাস্কের আশেপাশে কোন হাওয়া বেরোবে না। এইটি প্রথম এবং আবশ্যিক শর্ত একটি N-95 মাস্ক এর। এর থেকে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে আপনি বাইরের হাওয়া বাতাস থেকে আপনার শ্বাস প্রশ্বাস এর পথ কে ৯৫% সুরক্ষিত করতে পেরেছেন। 

এই মাস্কের দীর্ঘ ব্যাবহারে কিছু খারাপ দিক ও রয়েছে। কিন্তু সুরক্ষার নিরখে এই মাস্ক এর কোন তুলনা হয়না।

এখন বাজারে অনেক মাস্ক N-95 বলে খুব চল পেয়েছে। এদের বিশেষত্ব হল মাস্কের গায়ে একটি হাওয়া চলাচল করবার ভাল্ভ। কোন ভাবেই একে একটি ভাইরাস রোগের উপযুক্ত মাস্ক বলা চলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি Antipollution মাস্ক। শীতকালে দিল্লীর যে দুর্বিষহ অবস্থা হয়েছিল ধোঁয়াশার কারণে। এই মাস্ক ওই পরিবেশের জন্যে উপযুক্ত। দিল্লীর ঘটনার পর থেকে এই মাস্কের চল এত বেড়ে গিয়েছিল যে এর স্টক এখন ভারতবর্ষে অফুরান। বিভিন্ন নাম না জানা কোম্পানিও এখন এই  মাস্ক ঘরোয়া প্রজুক্তিতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্ত এই মাস্ক এর পিছনে অনেক টাকা ব্যায় করে যদি সঠিক মাস্ক না পান, তাহলে সুতির রুমালের সাথে এর কোন তফাৎ নেই। 


ভাল্ভ শুদ্ধু মাস্ক পেলে অবশ্যই ভাল্ভ এর গঠন পরীক্ষা করে নিন। সামান্য আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে একটা N-95 মাস্ক এর তকমা পাওয়া মাস্ক এখন বাজারে বহুল ভাবে ছড়িয়ে আছে। খেয়াল করবেন এই ভাল্ভ এর উপযুক্ত গুরুত্ব আছে কি না।ভাল্ভের মধ্যে দিয়ে এপার অপার পরিষ্কার আলো দেখতে পেলে, অবশ্যই সেই মাস্ক বিক্রেতাকে এড়িয়ে চলুন। ভাল্ভ এর সাথে মাস্ক এর আস্তরণের মধ্যে কোন ফাঁক থাকবে না। এইরকম মাস্ক চাঁদ সদাগরের বানানো লোহার ঘরের মতই অর্থহীন হয়ে থেকে যাবে। 

 
 এত খরচ করে বাজে N-95 মাস্ক কেনার বদলে ভালো সারজিকাল মাস্ক কিনুন। ৩ পল্লার সারজিকাল মাস্ক এর প্রায় ১০-২০ টি মাস্কের দামের সমান একটি N-95 মাস্ক। 
Set of medical protective face masks
Pexels

N-95 মাস্ক একাধিক বার ব্যাবহার করা উচিৎ না হলেও, সাধারণ মানুষ যেহেতু সরাসরি কোন করোনা রুগীর সামনে আসছেন না। সেক্ষেত্রে একটি এন ৯৫ মাস্ক কে পরিষ্কার করে নিয়ে দ্বিতীয় বা বহুবার ব্যাবহারের সুযোগ রয়েছে।

কখন বুঝবেন আপনার এন ৯৫ মাস্ক কে বাতিল করার সময় এসেছে?


N-95মাস্কের একদম প্রথম শর্ত যদি অকার্যকরী হয়, তাহলে N-95 মাস্ক বাতিল করার সময় এসেছে। অর্থাৎ ভালো ভাবে চেপে মাস্ক পরার পরেও যদি মাস্কের ভিতর ফু দিলে হাওয়া বেড়িয়ে যায়। সেক্ষেত্রে মাস্কটি বাতিল করার সময় হয়েছে। 

দ্বিতীয় শর্ত, মাস্কের ভিতরে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা। মাস্কটি একাধিক বার ব্যাবহারের পরে যে সময়ে এসে মনে হবে যে মাস্ক এর মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে শ্বাস নিতে পারছেন না। বেশ কষ্ট করে তবে শ্বাস নিতে হচ্ছে। পুরনো মাস্কটি তখনই বর্জন করে নতুন মাস্ক ব্যাবহার করুন। 


জুতো পরে প্রবেশ নিষেধ? 


এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই নিয়মের কোন বিকল্প নেই। বড় বড় শপিং মল বা গ্রসারি দোকানে একজন পরিষ্কার করার কর্মচারী নিয়োগ করা থাকে ছোট দোকানের ক্ষেত্রে এই নতুন করে একজন লোক রাখা একটু অসুবিধার। সেক্ষেত্রে জুতো খুলে আসাটা শ্রেয়। নিতান্তই যদি জুতো খুলে আসার সম্ভাবনা বা ব্যাবস্থা না হয় তাহলে জুতোর কভার দিতে পারেন। বিশেষ করে পার্লার বা সেলুনে। একটি জুতোর কভারের দাম এক জোড়া ৬ টাকা। গ্রাহক কে বললে তিনি নিজেও হয়ত এই ব্যাবস্থায় সায় দিয়ে নির্ধারিত মুল্য দিয়ে দেবেন। কিন্তু যে দোকানে জুতোর কভার দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন বড় ওষুধের দোকান। সেক্ষেত্রে একজন পরিচারক কে নিয়োগ করতে হবে যে প্রতি ঘণ্টা বা দু ঘণ্টায় ঘর পরিষ্কার করে দেবেন। 

গ্রাহকের স্যানিটাইজেশন?


অন্তত ৭০% অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে প্রতি গ্রাহক যেন নিজের কুনুই অব্দি পরিষ্কার করে নেন। বড়  বড় মিষ্টির দোকানে বেসিনের ব্যাবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে গ্রাহক সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় যেখানে গ্রাহক একটু দীর্ঘ সময়ের জন্যে স্থিত হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ও জিনিসে হাত দেবে সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা আবশ্যিক। 

স্যানিটাইজেশন টানেল বা কিউব উপস্থিতি এখন প্রায় অনেক জায়গায় দেখা যায়। এই টানেল বা টিউবের মাধ্যমে একজন আগন্তুকের পোষাক কে স্যানিটাইজ করা সম্ভব। দেখা গেছে এই প্রক্রিয়াতে প্রায় ৮% সাফল্য আসে সংক্রমণ রোধ করার জন্যে। 

একটি বিদেশী পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী একজন মানুষ যদি কোন করোনা আক্রান্ত রুগীর সাথে মাত্র ৩ মিনিটের সংসর্গে থেকেছেন। তাহলে সুতির পোষাকে প্রায় ১২.৭%  বিভিন্ন জীবাণুর উপস্থিতি দেখা গেছে। 

সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার দোকানে আসা গ্রাহকের পোষাক এই ভাইরাসের একটি আধার হিসেবে কাজ করতে পারে। যদিও পোষাক থেকে অন্য ব্যাক্তির সংক্রামিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বা ঘটনার তথ্য এখনও অব্দি পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই স্যানিটাইজেশন টানেলের মাধ্যমে আপনি একজন গ্রাহকের পোষাক মাধ্যমে বাহিত রোগ কে আটকাতে পারবেন। যদিও হু এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই কাজের কোন ভিত্তি নেই। কারণ রাস্তায় বা পরিবেশে থাকা ধুলোবালি অর্ধেক স্যানিটাইজার নষ্ট করে দেয়। তাই হিসেব বলছে এই প্রক্রিয়ায় সাফল্য ৮% এর বেশী নয়। 

সব জায়গায় স্যানিটাইজেশন টানেলের ব্যাবহার সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে একটি পাতি স্যানিটাইজেশন স্প্রে আপনার অনেক সুবিধা করে দেবে। গ্রাহক কে কিছু সময় দাঁড়াতে বলে তার পোষাকে এই স্প্রে দিলে আপনার সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনা ৬-৮%। একটু খেয়াল রাখতে হবে এই স্প্রে যেন গ্রাহকের চোখে না যায়। এবং এই স্প্রে করার সময় উভয় যেন অবশ্যই মাস্ক পরে থাকেন। দ্বিতীয় যে বিষয়ে একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সেটি হল এই স্প্রে এর মধ্যে থাকা উপাদান সম্পর্কে। হাইপোক্লরাইট জাতীয় উপাদান একটু বেশী মাত্রায় থাকলে সেই স্প্রে গ্রাহকের পোষাকের রঙ বা কাপড়ের ক্ষতি করতে পারে। 


দোকানের ভিতরের হাওয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য। 


দোকানের মধ্যে যদি হাওয়া চলাচলের উপযুক্ত ব্যাবস্থা না থাকে, সেক্ষেত্রে একটি বায়ু পরিশোধন যন্ত্র থাকা আবশ্যিক। বিশেষ করে সেলুন বা স্পা, বা রেস্তোরাঁ এর জন্যে। এইসব জায়গায় গ্রাহক মাস্ক খুলবেই এবং এখানে একই সময় একাধিক লোক উপস্থিত থাকবে। কাজেই তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের থেকে যাতে বিক্রেতা নিজে, দোকানের কর্মচারী, এবং অতি অবশ্যই অন্যান্য গ্রাহক সুরক্ষিত থাকেন সেই জন্যে একটি বায়ু পরিশোধন যন্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। 

এই যন্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা হল এরা বাতাসের সুক্ষাতিসুক্ষ কণা কে নিজের ফিল্টারের মধ্যে আবধ্য করে নিতে পারে। এই বিশেষ ফিল্টার ব্যাবস্থা কে হেপা ফিল্টার বলা হয়। 

কিছু বিষয় বিবেচনা করে এই ফিল্টারের জন্যে অর্থ ব্যায় করা উচিৎ যেমন ফিল্টারটি আদৌ হেপা ফিল্টার কি না। অনেক সংস্থা তাদের বায়ু শোধন যন্ত্রের কাটতির জন্যে হেপা লাইক, বা হেপা টাইপ তকমা মেরে বিক্রি করেন। বাজারে এই রকম কোন সত্যিকারের হেপা ফিল্টার আদৌ নেই। সত্যি কারের হেপা ফিল্টারকে H-10, H-12, H-13, H-14 ইত্যাদি নম্বরে লেখা হয়। সব থেকে আধুনিক এবং উপযুক্ত হেপা ফিল্টার হল H-14। একে মেডিক্যাল গ্রেড হেপা ফিল্টার ও বলা হয়। ঘরের বাতাসের জন্যে H-10, H-12 উপযুক্ত হলেও যেখানে এক সাথে অনেক মানুষের সমাগম সম্ভাবনা থাকে সেখানে H-12, H-13, বা H-14 ফিল্টার ব্যাবহার করা উচিৎ। 

আরও আধুনিক প্রজুক্তির সহায়তায় বায়ু শোধন যন্ত্র এখন অনেক বেশী সক্ষম ও পারদর্শী। যেমন প্লাজমা ক্লাস্টার সিস্টেম। বৈদ্যুতিক ব্যাবস্থার প্রয়োগে বাতাসের মধ্যে থাকা সুক্ষ কণা কে এই ফিল্টার সম্পূর্ণ শোধন করতে পারে। কার্বন ফিল্টার বাতাসে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাস শোধন করতে পারে। আর থাকে একটি প্রাইমারি ফিল্টার যা বাতাসের বড় বড় কণা কে আটকে বাতাসকে ধূলিকণা মুক্ত করতে সাহায্য করে। 

কি কি দেখে কিনতে হবে?


প্রথম হেপা ফিল্টার এর সত্যতা। হেপা টাইপ বা হেপা লাইক ফিল্টার দেখলে আগেই দূরত্ব বজায় রাখুন।  (Hepa type or Hepa like)

CADR: Clean Air Delivery Rate,  অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় একটি বায়ু শোধন যন্ত্র কত পরিমাণ বাতাস শোধন করতে পারে। একটি দোকানের জন্যে এই মান অবশ্যই ২০০ ঘন মিটার/ ঘণ্টা হতে হবে। 
Coverage area: প্রতিটি বায়ু শোধন যন্ত্রের নির্মাতা তাদের যন্ত্রের বিবরণে এই ব্যাখ্যা দিয়ে রাখে। এর হিসেব থিন এয়ার কন্ডিশন যন্ত্র কেনার মতন। অর্থাৎ ২৫০ বর্গ ফুট ঘরের জন্যে দের টন এসি কিনতে হবে, ইত্যাদি। একটি বায়ু শোধন যন্ত্রের ও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল অব্দি কার্যকারিতা থাকে। যেমন একটি যন্ত্রের ক্ষমতা ২০০ বর্গ ফুট, এদিকে তাকে ব্যাবহার করা হচ্ছে একটি ৩৫০ বর্গ ফুট ঘরে, সেক্ষেত্রে যন্ত্রের সাফল্যের হার কমে যায়।
Sound: এই যন্ত্রের থেকে বিকট শব্দ তৈরি হতে পারে। খুব বড় স্ট্যান্ড ফ্যান চালালে যেমন শব্দ হয়, এই যন্ত্রের ও ঠিক তাই নিয়ম। বদ্ধ ঘরের মধ্যে এইরকম একটি যন্ত্র দীর্ঘ সময় অব্দি চললে বিরক্তি আসে। সেক্ষেত্রে খেয়াল করতে হবে যন্ত্রের থেকে তৈরি শব্দের মাত্রা যেন কোন ভাবেই ৫০ দেসিবেল এর উপরে না  হয়। 

এগুলি ছারাও যে বিষয় নজর রাখতে হবে যেমন কোম্পানির পরিচিতি, কত বছরের Warranty, আনুসাঙ্গিক যন্ত্রের কেমন খরচ। ঠিকঠাক সারভিসিং পাওয়া যাবে কি না, এর মধ্যে কোন যন্ত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে কেমন দাম হবে ইত্যাদি। 

একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বললে হয়ত ব্যাপারটা সরল হবে।






এই এয়ার পিউরিফায়ারে  H-14 filter রয়েছে। কিন্তু  coverage area মাত্র  200sq. ft.




 
আর এই এয়ার পিউরিফায়ারে  HEPA type or HEPA like filter ব্যাবহার হয়েছে, কিন্তু  coverage area প্রায়  333 sw. ft.




সব থেকে উপযুক্ত বায়ু শোধন যন্ত্রগুলির মধ্যে কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া রইল। 



সাবধানে থাকুন, সুস্থ থাকুন।

অর্ক ভট্টাচার্য 

Some books might interest you,


No comments:

Post a Comment

Narcissistic Personality Disorders??

Narcissistic Personality Disorders This is an era of social media. When someone posts too many selfies or pictures about their d...